প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে নারী-পুরুষ উভয়েরই। নারীদের যেসব রোগ বেশি হয়, সেসবের মধ্যে ইউটিআই বা প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ অন্যতম। একবার ইউটিআই হলে বারবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বছরে তিনবার বা এর বেশি প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণের নাম রিকারেন্ট ইউটিআই। এটি হতে পারে একই জীবাণু বা নতুন কোনো জীবাণু দিয়ে। সাধারণভাবে পুরুষের চেয়ে নারীর প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ বেশি হয়। কারণ নারীদের মূত্রনালির দৈর্ঘ্য কম এবং এটির মুখের অবস্থান যোনিপথ এবং মলদ্বারের কাছাকাছি। মলদ্বারে স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর জীবাণু থাকে। ফলে খুব সহজেই সেখান থেকে জীবাণু মূত্রনালিতে ঢুকে পড়ে। এ জন্য প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।
রোগের কারণ : স্বাভাবিকের চেয়ে কম পরিমাণ পানি পান করা, দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা, অপরিচ্ছন্ন থাকা, নোংরা পানি ব্যবহার, যৌনমিলনের আগে-পরে প্রস্রাব না করা বা পরিচ্ছন্ন না হওয়া এ সংক্রমণের বড় কারণ। ছোট মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব নির্গমনের পর পানি দিয়ে পরিষ্কারের সময় বারবার হাত প্রস্রাবনালির মুখ থেকে মলদ্বার ছুঁয়ে আবার প্রস্রাব নালির মুখ স্পর্শ করার কারণে ঘন ঘন ইউটিআই হতে পারে। যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের সঙ্গে প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণের ব্যাপার রয়েছে। যাদের বারবার ইউটিআই হয়, তাদের মূত্রতন্ত্রের গঠনগত কোনো সমস্যা আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এ ছাড়া মূত্রতন্ত্রের কোথাও পাথর আছে কিনা, সেটা জানা জরুরি। মেনোপজ বা স্থায়ী ঋতু বন্ধ হলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে যোনিপথ ও মূত্রতন্ত্রের স্বাভাবিক সুরক্ষা কমে যায়। পানি পানের পরিমাণও হ্রাস পায়। তা ছাড়া বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণেও মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের বারবার ইউটিআই হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি কোনো অসুখের জন্য স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
উপসর্গ : প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ হলে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ বাড়ে। মূত্রনালিতে জ্বালাপোড়া, পেটে অস্বস্তি থেকে শুরু করে প্রচ- ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রস্রাব ঘোলা হওয়ার সঙ্গে রক্তও যেতে পারে। এ জন্য যথাসময়ে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। দেরি হলে মূত্রতন্ত্রের উপরি অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়। তখন রোগীর কাঁপানো জ্বর এবং কোমরে ব্যথা দেখা দেয়, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
করণীয় : প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না। প্রস্রাব করার পর টয়লেট পেপার দিয়ে চেপে মুছতে হবে। কখনো ঘষা যাবে না। মলত্যাগের রাস্তা থেকে প্রস্রাবের পথের দিকে কখনো মোছা যাবে না। পরিমিত পানি পান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে লেবুর শরবত, ফলের রস, ডাব ইত্যাদি খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলতে হবে। যাদের এ সমস্যা রয়েছে, তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানের পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাবার, যেমনÑ শাকসবজি, সালাদ, ফল, ইসবগুলের ভুসি ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে। তবে ইসবগুলের ভুসি ভিজিয়ে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ায় বেশি উপকার। এ সময় দিনে দই খাওয়া ভালো। যৌনমিলনের আগে পানি পান করুন এবং আগে-পরে প্রস্রাব করে পরিষ্কার হয়ে নিন। মাসিক বা রজঃস্রাবের সময় যৌনমিলন করবেন না।
Leave a Reply